জেনে নিন নতুন ভোটার হতে কি কি লাগে? ভোটার হওয়ার নতুন নিয়ম

জেনে নিন নতুন ভোটার হতে কি কি লাগে? ভোটার হওয়ার নতুন নিয়ম ২০২৪

আপনি নতুন ভোটার হতে চাচ্ছেন? কিন্তু আপনি জানেন না যে, নতুন ভোটারের জন্য আবেদন করার নিয়ম কি আর নতুন ভোটার হতে কি কি লাগে?

যদি এমনটা হয়ে থাকে, তাহলে আজকের এই পোস্ট টি আপনার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। এখানে আমরা নতুন ভোটারের জন্য আবেদন করার পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। সেই সাথে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরব তা হল নতুন ভোটার হতে কি কি লাগে?

সুতরাং নির্বাচন অফিসে কিংবা অনলাইনে নতুন ভোটার নিবন্ধন করার জন্য এই পোস্ট টি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

নতুন ভোটার হতে কি কি লাগে?

যারা নতুন ভোটার হতে চাচ্ছেন, তাদের বহুল জিজ্ঞাসিত একটি প্রশ্ন হল নতুন ভোটার হতে কি কি লাগে? চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক নতুন ভোটার হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলোর তালিকা।

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী নতুন ভোটারের জন্য আবেদন করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। আমরা এখানে সেই তালিকাটি তুলে ধরে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

চলুন এক নজরে নিচের তালিকায় দেখে নেই নতুন ভোটার হতে কি কি লাগে? অথবা অনলাইনে ভোটার আবেদন করতে কি কি লাগে?

  • অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ (বাধ্যতামূলক)
  • শিক্ষা সনদ (যদি থাকে)
  • পিতা-মাতার এনআইডি কার্ড (বাধ্যতামূলক)
  • প্রত্যয়ন পত্র (বাধ্যতামূলক)
  • নাগরিক সনদ (বাধ্যতামূলক)
  • ট্যাক্স রশিদ (বাধ্যতামূলক)
  • ইউটিলিটি বিলের কপি (বাধ্যতামূলক)
  • রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার রিপোর্ট (দিলে ভালো)
  • অঙ্গীকারনামা
  • পাসপোর্ট নাম্বার (যদি থাকে)
  • ড্রাইভিং লাইসেন্স (যদি থাকে)

এখন হয়ত আপনি চিন্তা করছেন আপনার তো এতগুলো ডকুমেন্ট নেই। তাহলে আমি কি করবো? চিন্তার কিছু নেই। আপনাকে এই তালিকার সব কাগজপত্র জমা দিতে হবে না।

নিচে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য কোন ক্ষেত্রে কি কাগজপত্র লাগবে তা নিয়ে আলোচনা করেছি। এখান থেকে দেখে নিন আপনার ক্ষেত্রে নতুন ভোটার হতে কি কি লাগে?

নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করতে কি কি লাগে?

সাধারণত নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করতে অল্প কয়েকটি ডকুমেন্ট লাগে। তবে যেসব এলাকায় রোহিঙ্গারা অবস্থান করে সেক্ষেত্রে বেশ কিছু ডকুমেন্ট জমা দিতে হয়। তো চলুন দেখে নেওয়া যাক আপনার নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করতে কি কি লাগবে।

 ❖ জন্ম নিবন্ধন সনদ: নতুন ভোটারের জন্য আবেদন করতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট হল আবেদনকারীর জন্ম নিবন্ধন সনদ।  নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করার সময় আপনাকে এই জন্ম নিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই অনলাইনে যাচাইকৃত সনদের কপি জমা দিতে হবে। হাতে লেখা জন্ম নিবন্ধন সনদ জমা দেয়া যাবে না। 

❖ শিক্ষা সনদ: আবেদনকারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী তার পিএসসি/জেএসসি/এসএসসি অথবা আপনার শেষ শিক্ষাগত সনদের কপি আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে। 

তবে যার কোন শিক্ষাগত সনদ নেই তার ক্ষেত্রে শিক্ষা সনদ জমা দেয়া লাগবে না। তবে শিক্ষা সনদ থাকা সত্ত্বেও শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ গোপন করলে পরবর্তীতে সার্টিফিকেটের নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম নাও মিলতে পারে।

❖ পিতা-মাতার এনআইডি কার্ডের কপি: নতুন ভোটারের জন্য আবেদনের সাথে অবশ্যই আবেদনকারীর পিতা মাতার এনআইডি কার্ডের ফটোকপি জমা দিতে হবে। যাদের পিতা-মাতা মৃত তারা চেয়ারম্যান কিংবা কাউন্সিলর কর্তৃক প্রত্যয়িত পিতা-মাতার মৃত্যু সনদ আবেদনের সাথে জমা দেবেন।

 কাবিননামা/বৈবাহিক সনদ: আবেদনকারী যদি বিবাহিত হন তাহলে অবশ্যই আবেদনের সাথে তার বিবাহের কাবিননামা/বৈবাহিক সনদ জমা দেবেন। অবিবাহিতদের ক্ষেত্রে বৈবাহিক সনদ প্রযোজ্য নয়। 

❖ স্বামী/স্ত্রীর এনআইডি কার্ডের কপি: বিবাহিতেদর ক্ষেত্রে স্বামী/স্ত্রীর Nid Card এর ফটোকপি জমা দিতে হবে। অবিবাহিতদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

 রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার রিপোর্ট: আবেদনকারীর রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করে তার রিপোর্টের কপি আবেদনের সাথে জমা দেয়া ভালো। এক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্রে রক্তের গ্রুপ ভুল আসার কোন সম্ভাবনা থাকে না।

 প্রতয়নপত্র: ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/পৌর মেয়র/ওয়ার্ড মেম্বর/ওয়ার্ড কাউন্সিলরের প্রত্যয়নপত্র আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে।

 নাগারিক সনদ: ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/ ওয়ার্ড কাউন্সিলর অথবা পৌর মেয়র এর থেকে আবেদনকারীর নাগরিকত্বের সনদ নিয়ে আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে (বাধ্যতামূলক)। 

 ইউটিলিটি বিলের কপি: নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করতে আপনার ঠিকানার সঠিকতা যাচাই করার জন্য আবেদনের সাথে বিদ্যুৎ/পানি/গ্যাস বিলের কপি জমা দিতে হবে (বাধ্যতামূলক)। বাড়ীর যেকোন একজন সদস্যের নামে হলেই হবে। আপনার নামে না থাকলেও সমস্যা নাই।

 ট্যাক্স রশিদ: আবেদনের সাথে চৌকিদারী ট্যাক্স রশিদ/পৌর করের রশিদ/বাড়ী ভাড়ার রশিদ (বাধ্যতামূলক)। বাড়ীর যেকোন একজন সদস্যের নামে হলেই হবে। 

 অঙ্গীকারনামা: আবেদনের সাথে পূর্বে ভোটার হইনি মর্মে একটি অঙ্গীকারনামা তৈরী করে জমা দিতে হবে। যাদের বয়স অনেক বেশি তাদের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক। যারা সবেমাত্র ষোল বছর বয়স হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

 পাসপোর্ট: আবেদনকারী যদি পাসপোর্টধারী কিংবা প্রবাসী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আবেদনের সাথে পাসপোর্টের কপি জমা দিতে হবে। (যদি থাকে)।

 ড্রাইভিং লাইসেন্স: আবেদনকারীর ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলে তার একটি কপি আবেদনের সাথে জমা দিতে হবে। (যদি থাকে)।

 প্রতিবন্ধী সনদ: আবেদনকারী শারীরিক/বুদ্ধি/বাক/দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলে প্রতিবন্ধী সনদের কপি জমা দিতে হবে।

 সার্ভিস আইডি কার্ড: আবেদনকারী চাকরিজীবি হলে তার সার্ভিস আইডি কার্ডের ফটোকপি আবেদনের সাথে যুক্ত করে দেবেন ( প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)।

💢 প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সুরক্ষা সেবা বিভাগ হতে প্রদত্ত দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদ।

আবেদনকারী UK, USA, কানাডা, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, হংকং, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের নাগরিকত্ব গ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে-

সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণকালে পঠিতব্য শপথ বাক্যে নিজ দেশের (বাংলাদেশের) আনুগত্য প্রত্যাহারের বিষয়টি উল্লেখ না থাকলে দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদের কপি জমা দিতে হবে না। তবে নিজ দেশের (বাংলাদেশের) আনুগত্য প্রত্যাহারের বিষয়টি উল্লেখ থাকলে দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদের কপি জমা দিতে হবে।

অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের ক্ষেত্রে দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদ প্রয়োজন নেই। 

বৈবাহিক সূত্রে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব অর্জনকারী বিদেশী নাগরিকগণের ক্ষেত্রে সুরক্ষা সেবা বিভাগ হতে প্রদত্ব নাগরিকত্ব সনদ আবশ্যক।

উপরোক্ত সকল ডকুমেন্টগুলোর মধ্যে আপনার ক্ষেত্রে যে সকল কাগজপত্র প্রযোজ্য। নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করার সময় সেগুলো জমা দিলেই হবে।

কিছু প্রশ্নের উত্তরঃ 

অনলাইনে ভোটার আবেদন করতে কি কি লাগে?

অনলাইনে ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করার জন্য আবেদনকারির শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, জন্ম নিবন্ধন সনদ, পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি ও ঠিকানা প্রমাণের জন্য বাসার Utility বিলের কপি/জমির দলিল/জমির খাজনা রশিদ/ বাসার Holding Tax রসিদ অথবা চেয়ারম্যান বা কমিশনারের প্রত্যয়ন পত্র লাগে।

ভোটার আইডি কার্ড পেতে কতদিন লাগে?

আপনি একাকী উপজেলা নির্বাচন কমিশন অফিসে গিয়ে নতুন ভোটার নিবন্ধন করলে আপনার কাগজপত্র যাচাই-বাছাই ও বায়োমেট্রিক কার্যক্রম শেষ হওয়ার পরবর্তী ১৫-২১ দিনের মধ্যে আপনি ভোটার আইডি কার্ডের এসএমএস পেয়ে যেতে পারেন।

তবে এলাকাভিত্তিক গণহারে ভোটার তথ্য হালনাগাদ কার্যক্রমের ক্ষেত্রে ভোটার আইডি কার্ড তৈরি হতে অনেকটা সময় কেটে যায়। অনেক ক্ষেত্রে ছয় মাসের অধিক সময় লেগে যায় নতুন ভোটার আইডি কার্ড প্রস্তুত হতে।

অনলাইনে নতুন ভোটার নিবন্ধন করার নিয়ম কি?

অনলাইনে ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করতে প্রথমে নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট https://services.nidw.gov.bd/ এখানে ভিজিট করুন অথবা এই লিঙ্কে ক্লিক করুন।

এখানে আপনার নাম, জন্ম তারিখ, মোবাইল নাম্বার, ক্যাপচা কোড সঠিকভাবে পুরন করে একটি একাউন্ট রেজিস্টার করুন। তারপর আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, ঠিকানা ও অন্যান্য তথ্য দিয়ে ভোটার নিবন্ধন ফরম পূরণ করুন ও আবেদনটি সাবমিট করুন।

আবেদনপত্রটির একটি কপি ও আপনার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন অফিসে গিয়ে জমা দিন।

পরিশেষ

এখানে আমরা পুরো পোস্ট জুড়ে অনলাইনে ভোটার আবেদন করার নিয়ম ও নতুন ভোটার হতে কি কি লাগে? এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করছি আপনি পোস্ট টি পড়ে খুব সহজেই নতুন ভোটারের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

নির্বাচন অফিসে গিয়ে আবেদন করার চেয়ে অনলাইনে ভোটার আবেদন করা সহজ প্রক্রিয়া। আপনি চাইলে ঘরে বসে আবেদন সম্পন্ন করতে পারেন।

তবে অনলাইনে ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করার বিষয়টি ঝামেলা মনে হলে আপনি স্থানীয় নির্বাচন কমিশন অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন। সেখানের কর্মরত কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জেনে নিতে পারেন নতুন ভোটার হতে কি কি লাগে? তারা আপনাকে নতুন ভোটার নিবন্ধন করার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে করতে সহায়তা করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *