১ মিনিটে জেনে নিন ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কি কি লাগে?

NID সংশোধন করতে চান? ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কি কি লাগে ?

নতুন ভোটার হয়েছেন এবং আপনার এনআইডিতে কোন তথ্য ভুল এসেছে? ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে চাচ্ছেন? জেনে নিন ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কি কি লাগে।

আমরা অনেক সময় নামের বানানে ভুল করে থাকি অথবা নির্বাচন কমিশন থেকে স্মার্ট কার্ড প্রদান করার সময় বিভিন্ন ভুল করে থাকে। আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম বা অন্য কোন ভুল তথ্য আসলে যত দ্রুত সম্ভব অনলাইনে এনআইডি কার্ড সংশোধন করে নিন।

কারন বর্তমান সময়ে জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্ট আইডি কার্ড হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি ডকুমেন্ট। যা সকল গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগে।

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থা অনুযায়ী ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের ৪ টি ক্যাটাগরি রয়েছে। প্রতিটি ক্যাটেগরির জন্য আলাদা আলাদা ডকুমেন্টের প্রয়োজন হয়।

জেনে নিন ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কি কি লাগে?

সূচিপত্র দেখুনঃ

ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কি কি লাগে?

এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন হল “ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কি কি লাগে?” যদিও ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার জন্য ক্যাটেগরি ভেদে ভিন্ন ভিন্ন ডকুমেন্টের প্রয়োজন হয়।

তবে প্রায় সব ক্যাটেগরির সংশোধনের জন্য সাধারণত শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, জন্ম নিবন্ধন, মা-বাবার এনআইডি কার্ড, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, বিবাহ কাবিন নামার প্রয়োজন হয়।

ভোটার আইডি কার্ড বা স্মার্ট আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য কমপক্ষে ২ টি প্রমাণপত্র বা ডকুমেন্ট আপলোড করা উচিত।

নিচে ক্যাটেগরি ভেদে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টের তালিকা তুলে ধরা হয়েছে ।

ভোটার আইডি কার্ড নাম সংশোধন

ভুলবশত জাতীয় পরিছয়পত্র বা ভোটার আইডি কার্ডে ভুল নাম এসেছে? আপনার স্মার্ট এন আইডি কার্ডটি কোথাও ব্যাবহার করতে পারছেন না? এখন আপনি ভোটার আইডি কার্ড নাম সংশোধন করার কথা ভাবছেন।

তাহলে এক্ষেত্রে আপনাকে সম্পূর্ণ নাম সংশোধন করতে হবে । সম্পূর্ণ অংশ নাম পরিবর্তন করার জন্য নিচের ডকুমেন্টগুলো প্রয়োজন হয় ।

  • পিইসিই/ জেএসসি/ এসএসসি বা সমমান/ বা তার উর্দ্ধে কোন সনদ
  • জন্ম নিবন্ধন
  • পাসপোর্ট (যদি থাকে )
  •  ড্রাইভিং লাইসেন্স (যদি থাকে )
  • সন্তানদের জাতীয় পরিচয়পত্র (যদি থাকে )
  • এমপিও/ সার্ভিস বইয়ের কপি (যদি থাকে )
  • বিবাহের কাবিন নামা (যদি থাকে )
  • তদন্ত প্রতিবেদন
  • উপজেলা নির্বাচন অফিসারের প্রতিবেদন
  • বাংলা নাম অনুসারে ইংরেজি বা ইংরেজি নাম অনুসারে বাংলা

এখন বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাদের বাংলা নামের পাশাপাশি ইংরেজি নামের প্রয়োজন হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের ভোটার আইডি কার্ডে বাংলা নাম ঠিক থাকলেও ইংরেজি নামের বানানে ভুল আসে। ফলে আমাদের পাসপোর্ট বা অন্যান্য জরুরি কাজে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়।

বর্তমানে ভোটার আইডি কার্ডের ইংরেজি নাম অনুসারে বাংলা নাম সংশোধন অথবা বাংলা নাম অনুসারে ইংরেজি নাম সংশোধন করতে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলোঃ

  • জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি
  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের কপি
  • পাসপোর্ট অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্সের

ভোটার আইডি কার্ডে পিতা ও মাতার নাম পরিবর্তন/সংশোধন

আপনার ভোটার আইডি কার্ডে পিতা-মাতার নাম ও শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেটে পিতা-মাতার  নাম অথবা নামের বানান একই না হলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আপনাকে সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে ।

আপনি যদি নতুন ভোটার হয়ে থাকেন এবং আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রে পিতা-মাতার নাম ভুল এসেছে তাহলে অনলাইনে আবেদন করে আপনার বাবা-মায়ের নাম বা ভোটার আইডি কার্ডে মায়ের নাম সংশোধন করে নিতে পারেন ।

ভোটার আইডি কার্ডে পিতা মাতার নাম সংশোধন করতে প্রয়োজন হবেঃ

  • পিইসিই/ জেএসসি/ এসএসসি বা সমমান/ বা তার উর্দ্ধে কোন সনদ
  • জন্ম নিবন্ধন
  • পাসপোর্ট
  • ড্রাইভিং লাইসেন্স
  • পিতা/মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র
  • ভাই-বোনের জাতীয় পরিচয়পত্র (যদি থাকে)
  • ভাই-বোনের পাবলিক পরীক্ষার সনদ (যদি থাকে)
  • এমপিও/ সার্ভিস বইয়ের কপি

জন্ম তারিখ সংশোধন করতে কি কি লাগে?

৫ বছর পর্যন্ত জন্ম তারিখ সংশোধন

যদি ভুলবশত স্মার্ট এনআইডি কার্ডে বয়স ভুল আসে এবং সেটা সঠিক বয়সের তুলনায় ৫ বছর বা ৫ বছরের কম পার্থক্য হলে ভোটার আইডি কার্ডে জন্ম তারিখ সংশোধন বা পরিবর্তন করার জন্য নিচের ডকুমেন্টগুলো জমা দিতে হবেঃ

  • পিইসিই/ জেএসসি/ এসএসসি বা সমমান/ বা তার উর্দ্ধে কোন সনদ বা রেজিস্ট্রেশন কার্ডের সত্যায়িত অনুলিপি (উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট প্রযোজ্য নয়)
  • জন্ম সনদ
  • পাসপোর্ট
  • ড্রাইভিং লাইসেন্স
  • সার্ভিস বই/ এমপিও শীটের কপি/ চাকরীর আইডি/ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অফিস স্মারক সম্বলিত পত্র

জন্ম তারিখ সংশোধন (সকল ক্ষেত্রে)

জাতীয় পরিচয়পত্রের/ ভোটার আইডি কার্ডের জন্ম তারিখ যদি ভুলবশত আসল বয়সের তুলনায় ৫ বছরের বেশি আসে সেক্ষেত্রে ভোটার আইডি কার্ডে জন্ম তারিখ সংশোধন করতে কি কি লাগেঃ

  • পিইসিই/ জেএসসি/ এসএসসি বা সমমান/ বা তার উর্দ্ধে কোন সনদ বা রেজিস্ট্রেশন কার্ডের সত্যায়িত অনুলিপি (উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট প্রযোজ্য নয়)
  • জন্ম সনদ
  • পাসপোর্ট
  • ড্রাইভিং লাইসেন্স
  • সিভিল সার্জন কর্তৃক বয়স প্রমাণের রেডিওলজিক্যাল মেডিক্যাল টেস্ট রিপোর্ট
  • সার্ভিস বই/ এমপিও শীটের কপি/ চাকরীর আইডি/ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অফিস স্মারক সম্বলিত পত্র

ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা পরিবর্তন করতে কি কি লাগে?

জীবনের বিভিন্ন সময়ে ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়। অনলাইনে ভোটার এলাকা স্থানান্তর করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হয়।

এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে আপনি যে নতুন ঠিকানায় ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে চাচ্ছেন সেই ঠিকানার যাবতীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে।

চলুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা পরিবর্তন করতে কি কি লাগেঃ

  • সিটি কর্পোরেশন/ পৌরসভা/ ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক প্রদত্ত নাগরিকত্ব সনদ
  • জমির দলিল (যদি থাকে)
  • ইউটিলিটি বিল
  • জন্ম নিবন্ধন
  • পাসপোর্ট (যদি থাকে)
  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ (অপশনাল)
  • অন্যান্য প্রমাণ

ভোটার আইডি কার্ড জন্ম সাল ও জন্মস্থান সংশোধন

ভোটার আইডি কার্ড জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় কগজপত্রঃ

  • সিটি কর্পোরেশন/ পৌরসভা/ ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক প্রদত্ত সনদ;
  • পাসপোর্ট;
  • জন্ম নিবন্ধন সনদ
  • পিইসিই/ জেএসসি/ এসএসসি বা সমমান/ বা তার উর্দ্ধে কোন সনদ বা রেজিস্ট্রেশন কার্ডের সত্যায়িত অনুলিপি (উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট প্রযোজ্য নয়)
  • পাসপোর্ট (যদি থাকে)
  • ড্রাইভিং লাইসেন্স (যদি থাকে)

ভোটার আইডি কার্ডে বৈবাহিক অবস্থা পরিবর্তন/সংশোধন

এন আই ডি কার্ডে বৈবাহিক অবস্থা পরিবর্তন করার জন্য অনলাইনে আবেদন করে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কমিশন অফিসে জমা দিতে হবে।

ভোটার আইডি কার্ডে বৈবাহিক অবস্থা পরিবর্তন করার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলোঃ

  • বিবাহের কাবিননামা
  • হিন্দু ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিবাহ রেজিস্ট্রেশন না হয়ে থাকলে উভয় পক্ষ কর্তৃক প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এফিডেভিট (হলফনামা)
  • সন্তানদের পাবলিক পরীক্ষার সনদ (যদি থাকে)
  • সন্তানদের জাতীয় পরিচয়পত্র (যদি থাকে)
  • বিবাহ বিচ্ছেদ রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট
  • স্বামী/স্ত্রীর মৃত্যুর সনদ
  • অথবা, অন্যান্য গ্রহণযোগ্য প্রমাণপত্র

ছবি, স্বাক্ষর, আঙ্গুলের ছাপ ও আইরিশ পরিবর্তন/ সংশোধন

জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবি, স্বাক্ষর, আঙ্গুলের ছাপ ও আইরিশ পরিবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল কাজ। এক্ষেত্রে আপনাকে কেন্দ্রীয় তথ্য ভান্ডারে স্ক্যানারের সাহায্যে আঙ্গুলের ছাপ পরীক্ষা করে আপনার পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে।

অথবা, এসব তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদনকারী একই এই ব্যক্তি মর্মে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার প্রত্যয়নপত্র নিতে হবে।

অনলাইনে ভোটার কাড সংশোধনের জন্য আবেদন করে আপনার ভোটার আইডি কার্ডের ছবি, স্বাক্ষর, আঙ্গুলের ছাপ ও আইরিশ পরিবর্তন পারবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে অনলাইনে আবেদন করে আবেদন ফি পরিশোধ করে টাকার রিসিভ কপি সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট নির্বাচন অফিসে জমা দিতে হবে।

এরপর আপনার আবেদন টি অনুমোদিত হলে আপনার ভোটার আইডি কার্ডের ছবি, স্বাক্ষর, আঙ্গুলের ছাপ ও আইরিশ পরিবর্তন করার জন্য অফিসে গিয়ে স্ক্যানারের সাহায্যে স্বাক্ষর, আঙ্গুলের ছাপ ও আইরিশ দিতে হবে।

বহুল জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্নের উত্তরঃ

ভোটার আইডি কার্ড নাম সংশোধন করতে কি কি লাগে?

উত্তরঃ এন আই ডি (NID) কার্ড বা ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, জন্ম নিবন্ধন সনদ, পিতা-মাতার স্মার্ট আইডি কার্ড, পাসপোর্ট অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রয়োজন হয়।

ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা পরিবর্তন করতে কি কি লাগে?

উত্তরঃ ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা পরিবর্তন করতে সিটি কর্পোরেশন/ পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক প্রদত্ত নাগরিকত্ব সনদ, জন্ম নিবন্ধন সনদ, পাসপোর্ট, জমির দলিল, বিদ্যুৎ /পানি/ গ্যাস বিলের কপি, বা অন্যান্য গ্রহণযোগ্য ডকুমেন্ট লাগবে।

ভোটার স্থানান্তর অনলাইন আবেদন করতে কি কি লাগে?

উত্তরঃ ভোটার স্থানান্তর আবেদন করতে কি কি কাগজপত্র লাগে এ বিষয়ে ভোটার ট্রান্সফার ফরম একটি তালিকা দেওয়া আছে। ভোটার এলাকা পরিবর্তন ফরমের ৮ নং ক্রমিকে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্রের সুস্পষ্ট ধারণা উল্লেখ করা আছে।

আপনি যে ঠিকানায় ভোটার স্থানান্তর করে আনতে চাইছেন যাবতীয় কাগজপত্র সেই ঠিকানার হতে হবে।

অনলাইনে এনআইডি কার্ড সংশোধন করতে কি কি লাগে?

উত্তরঃ অনলাইনে এনআইডি কার্ড সংশোধন করতে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, জন্ম নিবন্ধন সনদ, মা-বাবার এনআইডি কার্ডের কপি, পাসপোর্ট অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্স, অন্যান্য ডকুমেন্ট।

এগুলোর মধ্যে কমপক্ষে ২ টি প্রমাণপত্র বা ডকুমেন্ট আপলোড করা উচিত।

ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে কতদিন সময় লাগে?

উত্তরঃ ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে প্রায় ১০-১৫ দিন লাগে। তবে কখনো কখনো ১ মাসের ও বেশি সময় লেগে যায়। এটা সম্পূর্ণই নির্ভর করে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, কর্মচারীদের কাজের ব্যস্ততার উপর।

পরিশেষ,

পুরো পোস্ট জুড়ে আমরা ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কি কি লাগে? এবং অনলাইনে এনআইডি কার্ড সংশোধন করার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করছি এই পোস্টের মাধ্যমে আপনি এন আই ডি কার্ড সংশোধন করার দিক নির্দেশনা পেয়ে গেছেন।

এরপরেও যদি আপনার মনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কি কি লাগে? এই বিষয়ে কোন তথ্য জানার থাকে। তাহলে কমেন্ট বক্সে জানাবেন। আমরা আপনার উত্তর দেওয়ার জন্য সদা প্রস্তুত থাকব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *